স্যাম্পলের জন্য গণস্বাস্থ্যের একমাত্র ভরসা এখন চীন

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্প সফল করতে ভরসা এখন চীন। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের রিএজেন্ট দিয়েই কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতির সব স্যাম্পল তৈরি করতে হবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে। দ্বিতীয় দফায় আরও একশ কেজি রিএজেন্ট চীন থেকে আমদানি করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

আগামী ২১ এপ্রিল রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছাবে। প্রথম দফায় গত পাঁচ এপিল এই চীন থেকেই ১০ কেজি রিএজেন্ট আমদানি করেছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, করোনা দুর্যোগে আকাশপথে যোগোযোগ স্থবির হয়ে পড়ায় ইংল্যান্ডের দ্য ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির একশ কেজি রিএজেন্ট এখন পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের হাতে পৌঁছেনি। কবে নাগাদ পৌঁছাবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার, বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের ব্যক্তিগত সহযোগিতায় চীন থেকে দ্বিতীয় দফায় একশ কেজি রিএজেন্ট আনার সব প্রক্রিয়া শেষ করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২১ এপ্রিল বেসরকারি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওই রিএজেন্টগুলো ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। এই রিএজেন্ট দিয়েই তৈরি হবে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’-এর এক লাখ স্যাম্পল। আর তা দিয়ে মাত্র ১৫ মিনিটে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী ২১ এপ্রিল চীন থেকে রিএজেন্টের দ্বিতীয় চালান আসবে। ওই রিএজেন্ট দিয়ে আমরা এক লাখ স্যাম্পল তৈরি করতে পারব।’

সূত্রমতে, চীনের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও রিএজেন্ট আমদানির চেষ্টা করছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। এখানেও আকাশপথ যোগাযোগ মূল ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে আনার যে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের সময় ভারত থেকে কিছু রিএজেন্ট আনার চেষ্টা করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

এ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আকাশ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আমরা তো ইংল্যান্ডের রিএজেন্টগুলো আনতে পারলাম না। তাই ভারত থেকেও কিছু রিএজেন্ট আনার চেষ্টা করছি। দেখি ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সে ভারত থেকে কিছু রিএজেন্ট আনা যায় কি না।’

এদিকে, প্রথম দফায় চীন থেকে আনা রিএজেন্ট দিয়ে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’-এর ১০ হাজার স্যাম্পল তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে সরকারের কাছে স্যাম্পল হস্তান্তর করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

প্রথম দফায় তৈরি ১০ হাজার স্যাম্পল ১০টি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিতে চায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এদের মধ্যে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিডিসি, বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ প্রশাসন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি অন্যতম।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে দ্বিতীয় দফায় আনা রিজএজেন্ট দিয়ে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’-এর এক লাখ স্যাম্পল তৈরির কাজে হাত দেবেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে চলতি এপ্রিলেই দেশে উদ্ভাবিত র‌্যাপিড টেস্ট পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের কাজ শুরু করবেন তারা।

জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের অ্যাপ্রুভাল না পেলে স্যাম্পল তৈরি করে কী করব? ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার স্যাম্পল দিয়ে দেবো। তারা আগে ব্যবহার করুক। দেখুক কাজ হয় কি না। তারপর আমরা বাকি স্যাম্পল বানাতে শুরু করব।’

বাংলাদেশ ওষুধ প্রশসানের কাছ থেকে গত ১৮ মার্চ রিএজেন্ট আমদানির অনুমোদন পাওয়ার পরই ইংল্যান্ডের দ্য ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির কাছ ১০ ধরনের একশ কেজি রিএজেন্ট আমাদানির জন্য এলসি খোলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। দ্রুততার সঙ্গে রিএজেন্টগুলো সরবরাহের জন্য ইংল্যান্ডের ওই কোম্পানিকে তাগিদ দেয় তারা।

বিষয়টি গুরুত্ব উপলব্ধি করে দ্য ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানি ২৫ মার্চের মধ্যে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রথম দফায় একবার তারিখ পরিবর্তন করে ইংল্যান্ডের কোম্পানিটি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তারা জানায়, ৩০ মার্চ রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেবে তারা।

কিন্তু ৩০ মার্চ বিকেলে দ্য ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানি আরেক দফা তারিখ পরিবর্তন করে। তারা জানায়, ৬ এপ্রিলের আগে রিএজেন্ট পাঠানো সম্ভব না। অবস্থা বেগিতকি দেখে ৫ এপ্রিল চীন থেকে ১০ কেজি রিএজেন্ট আমদানি করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আর ন্যাটিভ অ্যান্টিজেনের রিএজেন্টগুলো এখনো দেশে এসে পৌঁছেনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *